বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১১

ফতোয়ার খঁড়গ

খবরটা শুনে একাব্বর মিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।

- 'ইশশ্‌! দ্যাশের বড় আদালত একদিন আগে যদি এইরাম একখান রায় দিত, তাইলে একমাত্র দুধের গাইটা আর বেচতে অইত না।' খেদোক্তি করে উঠে একাব্বর- 'ম-রা, খালে যখন নামলি, লুঙ্গি ভিজায়া নামলি ক্যান? আর লুঙ্গি যখন ভিজাইলি, ন্যাংটা অইলি ক্যান?'

গৃহস্থালী সংসার একাব্বরের। পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত জমি-জিরাত যাই আছে, খেয়েদেয়ে কোন রকম চলে যায়। স্বচ্ছলতার অংকে সুখে না থাকলেও অসুখী বলা যায় না একাব্বর মিয়াকে। শুধুমাত্র একটি সন্তানের আশায় মনের মধ্যে অপ্রাপ্তির দুঃখবোধ খচ্‌খচ্‌ করে সব সময়। সন্তান দানে ব্যর্থ বাঁজা মাগিটাকে বহু বুদ্ধি করে খেঁদিয়েছিল একাব্বর। বিয়ের পনর বছরের মধ্যে যে একটি সন্তান দিতে পারেনি, এ সংসারে তার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না সে। বাঁজা স্ত্রীকে বিদায় করতে তার বেশী বেগ পেতে হয়নি। বুদ্ধিমান একাব্বর বুদ্ধির জোরে বড় মসজিদের ইমাম সাহেবের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে তার ইচ্ছার কথা জানাল। ব্যাস, ফতোয়ার কাফ্‌ফারা পেয়ে ইমাম সাহেব একাব্বর আর তাঁর স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলাহীন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিল। বিদায় হল আপদটা।

সঙ্গীহীন পশুও এই সমাজে বেমানান। আর সেতো জলজ্যান্ত মানুষ। রাতে ঘুমাতে গেলে সারা শরীরের রক্তের উষ্ণতা যখন জমাট বেঁধে নিম্নগামী হয়ে বিশেষ অঙ্গে হিস্‌হিস্‌ জাগায়, তখন বড়ই বিচলিত বোধ করে একাব্বর। এদিকে বংশের প্রদীপের প্রয়োজনীয়তা মূখ্য হয়ে উঠে। একমাসের মাথায় এক চপলা তন্বী ষোড়শীকে বধু করে ঘরে উঠায় একাব্বর।
বিধিবাম! একি হল একাব্বরের!! ষোড়শীর উষ্ণ রক্তের চপলতায় প্রতিদিন খেঁই হারিয়ে ফেলে সে। নতুন বধুর উষ্ণতা এতই তীব্র, এ যেন আজন্ম শীতল হওয়ার নয়। মাঝ দরিয়ায় প্রতিদিন হাবুডুব খেতে খেতে ক্লান্ত একাব্বর। বধুর অতৃপ্তির গোদ্‌গোদ্‌ 'লু' হাওয়া বয়ে যায় দিনভর একাব্বরের উপর দিয়ে। প্রতিদিনের এই অতৃপ্তির খেঁদ বিন্দু বিন্দু দাঁনা বেঁধে সিন্ধূতে পরিণত হতে থাকে।

'বুড়া ভাম! মাটি কাঁটতি জানিস নাতো, কোঁদাল ধরিস ক্যান'? প্রতিদিনকার বউয়ের তাচ্ছিল্য ভরা এই উক্তিটা যেন একাব্বরের পৌরষত্বকে নিদারুন উপহাস করে। তারপরও নিজের অক্ষমতায় বউয়ের উপহাসকে নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছে সে। তার প্রয়োজন বংশের আলো।

ভেবে পায়না একাব্বর। প্রদীপে এত তেল ভরে সে, কিন্ত সলতে ভিজে না কেন? তবে কি তারই অক্ষমতা। এ বড়ই কষ্টের অনুভুতি। অব্যক্তেয় কষ্টে তার বুকটা সারাক্ষণ খচ্‌খচ্‌ করে। কষ্টের ভোতা অনুভূতি নিয়ে সলতে ভেজার অপেক্ষায় দিন গুনছে একাব্বর। এই অপেক্ষার কাছে বউয়ের 'মাটি কাটা, কোঁদাল ধরতে না পারা'র উপহাসকে সে ম্লান করে রাখে; স্বেচ্ছায়, অবলীলায়।

ঘটনার জট লাগে অন্যখানে। বউ তার অতৃপ্তের বাসনার সলিল রচনা করতে চায় তারই আপন ভাইপো'র সাথে, যে কিনা তাঁর বউয়ের প্রায় সমবয়সী। একাব্বরকে দেখিয়ে দেখিয়ে ভাইপো'র সাথে বালখিল্যতা, আদিখ্যেপনা। বউয়ের হাঁসাহাঁসি, মাতামাতি বড়ই নিষ্ঠুর ঠেকে। হয়তঃ ভাইপো'র মনে নেই কোন হারামীপনা। কিন্তু ভাইপো'র সাথে বউয়ের এই লাস্যময়ী আচরণ শুধু একাব্বর বা তার পৌরষত্বকে উপহাস করছে না। সমাজকেও জানান দিচ্ছে তাঁর কোঁদাল ধরতে না পারার ইতিকথা। বউয়ের এ কাহিনী চাওর হতে থাকে আকাশে বাতাসে। এ বড়ই অপমানের, বড়ই লজ্জ্বার।

সহ্যের সীমা যখন অনতিক্রম্য পাহাড় ডিঙ্গিয়ে যায়, একাব্বর চুড়ান্ত স্বিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলে। আগের ন্যয় বুদ্ধি খাঁটিয়ে আপদ বিদায় করার মানসে ফতোয়ার শানধার খঁড়গটির দ্বারস্থ হতে একাব্বর যায় বড় হুজুরের কাছে।

কিন্তু একি শোনাল বড় হুজুর! সরকারের সদ্য করা নারীনীতির কারণে হুজুরের ফতোয়ার খঁড়গটির শান নাকি নষ্ট হয়ে গেছে। ভোতা এই খঁড়গে একাব্বরের বাসনা পুরণ হওয়ার নয়। অনেক বলে কয়েও হুজুরকে সে রাজী করাতে পারল না। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজটি না করে হুজুর জেলা শহরে একজন উকিলের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতের সরাণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিল। এ অনেক খরচের ব্যাপার। সমাধানের পথও আবার দীর্ঘ।

হোক খরচ। তারপরও দিনকে দিন এই জোয়ান মাগীটার বেহাল্লাপনা একাব্বর সহ্য করতে পারছিল না। জমির ফসল ঘরে না উঠার কারণে হাতেও নগদ নেই। অনুন্যপায় হয়ে তাঁর দুগ্ধবতী গাভিটি বিক্রি করে আগুন যৌবনা রাক্ষুসীটাকে বিদায় করার মনস্থির করল।

একাব্বর ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে যখন গাভি বিক্রির টাকাগুলো গুনছিল, তখনি দ্যাশের বড় আদালতের ফতোয়া জায়েজ করার খবরটা পেল। খবরটি পেয়ে গাভি হাঁরানোর দুঃখে মাথায় হাত দিয়ে বসে উপরের খেঁদোক্তিগুলো করলেও, মনে মনে সে খুশী। যাক মাগীটাতে অল্পতেই বিদায় করা যাবে।

- 'রাইতেই বড় হুজুরের ফতোয়ার ছেনিটার ধার দেইখা আসতে অইব' - একাব্বরের আহাল্লাদ ভরা স্বগোক্তি।

অনুগল্প
১৫/০৫/২০১১
ঢাকা
নাগরিক ব্লগে প্রথম প্রকাশিত।

শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

নিঃসঙ্গ বিশ্বকাপ

শাহেদ নিজেও জানে - 'ভ্রু' কোঁচকালে তাকে দেখতে খুব বাজে লাগে।
পারতপক্ষে শাহেদ সহজেই 'ভ্রু' কোঁচাকায় না। মানুষগুলো কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। আপনমনে নিজের মনের সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলিকে শারিরিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে যে প্রকাশ করবে, তাতেও মানুষ বিরক্ত হয়। শাহেদের অতি গোপনে 'ভ্রু' কোঁচকানোটাও মানুষের চোখে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে শাহেদের ধারনা হয়, ইদানিং মানুষগুলো বড় বেশী খুঁত-খুঁতে স্বভাবের হয়ে গেছে। সামান্য 'ভ্রু' কোঁচকানোর মধ্যে মানুষ এত বিরক্তির যোগান পায় ক্যামনে ? রাগে এক ধলা থুঃথুঃ মুখ উগ্‌রে বের হয়ে গেল।
শাহেদ আপন মনে বিড় বিড় করল- 'না, রাগকে প্রশ্রয় দিতে নেই'। সেদিন পাবলিক বাস-এ চড়ার সময় একটা স্টিকারে লিখা বানী- 'রেগেছেন কি হেরেছেন' দেখে শাহেদের খুব মনোপুত হয়েছিল।
'বাহঃ, খুব সুন্দর কথাতো। রেগেছেন কি হেরেছেন।'
মহুর্তেই স্টিকারের বাণীটি শাহেদের রাগকে পানি করে দিল। না, রাগা যাবে না। সত্যিই তো, রেগে জেতার ইতিহাস কি মানব সভ্যতা তৈরী করতে পেরেছে? রাগলেই হারতে হয়।
শাহেদ'র ধারণা, রাগ করারও একটা বয়স আছে। কিন্তু কতটুকু বয়স পর্যন্ত রাগ করাটা মানাসই, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তবে, পঞ্চাশ বছর রাগ করার জন্য যে একদম বেমানান, সেটা শাহেদ স্পষ্টতই অনুধাবন করতে পারছে। কিশোর বয়সটা হয়তঃ রাগ করার জন্য ভরা পূর্ণিমা। রাগ করে ভাত খাবে না। মা'র সাথে রাগ করলে বাবা এসে রাগ ভাঙ্গাবে, বাবার সাথে রাগ করলে মা'র কাছে চোখ কঁচলাতে কঁচলাতে ফোলা চোখ দেখিয়ে সহানুভূতি আদায় করবে।
কিশোর বয়সটা শাহেদের কাছে ইদানিং খুব আকর্ষনীয় বয়স মনে হয়। আহ, আজ যদি রিয়াজ বেঁচে থাকত, তাহলে আঠার বছর পূর্ণ হত। ভরা পূর্ণিমা।
'ভ্রু' কোঁচকানো কি রাগের পর্যায়ে পড়ে? এটি রাগের নাকি বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ? মাঝে মাঝে শাহেদ ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। শাহেদ ভাবে- 'থাকনা, 'ভ্রু' কোঁচকানো শাহেদকে মানুষ যেহেতু পছন্দ করে না, পরিহার করে চলাই উত্তম'। জীবনের সাথে আপোষ করতে করতে সবইতো বাদ দিয়েছে। না হয় 'ভ্রু' কোঁচকানোটা বাদ দিবে এবার।
সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করার পরিপূর্ন মানষিকতা যখন তৈরী হচ্ছিল, তখনই বাঁধল বিপত্তি। সাধারণতঃ কোন বিষয়ে শাহেদ একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে সহজে আর সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত আসে না। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপ শাহেদকে এ প্রথম নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল। ক্রিকেট বিশ্বকাপ, বিশেষভাবে ক্রিকেট নিয়ে সবার এই মাতামাতি, আদিখ্যেপনা শাহেদের 'ভ্রু' কে আবার অবাধ্য হতে বাধ্য করল। ক্রিকেট উৎসবের দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে, শাহেদের ধারনা- 'তার ভ্রু'টি ততই অধিকতর আকারে কোঁচকাচ্ছে। রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, টেলিভিসনের চ্যানেলগুলো, পত্রিকার পাতা, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল, বিজ্ঞাপনে ক্রিকেট তারকার আধিক্য, টিভিতে ক্রিকেটিয় নাটকের সিরিয়াল, হালের আধুনিক এফ,এম রেডিও যেখানেই যাও শুধু ক্রিকেট আর ক্রিকেট। আরে বাবা, এর বাহিরেওতো জীবন আছে।
শাহেদের মনে হচ্ছে, সবার এই ক্রিকেট উল্লাসে মেতে উঠা যেন তার বিরক্তিতে 'ভ্রু' কোঁচকানোকে উস্‌কে দেওয়ার জন্যই। কিসের বিশ্বকাপ ! কিসের ক্রিকেট!! রিয়াজবিহীন ক্রিকেট'র অস্ত্বিত্তই যেন শাহেদ চিন্তা করতে পারে না।
রিয়াজ হচ্ছে শাহেদের বড় ছেলে। প্রথম সন্তান সব বাবা-মায়ের কাছেই বড় আদরের হয়। ভরা যৌবনের সব স্বপ্ন অংকিত হয় প্রথম সন্তানকে ঘিরে। পৃথিবীর সব বিখ্যাতদের কীর্তি শাহেদ রিয়াজের মধ্যে দেখত। ছেলের মধ্যে কখনো আইনষ্টানের মত বিজ্ঞানী, কখনো ভাস্কোদাগামা, কখনও কনফুসিয়াস, চে-গুয়েভারা, লেলিন, মাওসেতুং, আব্রহাম লিংকন, বঙ্গবন্ধু, নির্মেলেন্দু গুন কিংবা সৈয়দ শামসুল হক'র ছায়া দেখতে পেত। দেখতে দেখতে চরম এক সুখানুভূতির সঙ্গীতে ছেলেকে নিয়ে শাহেদ হাওয়ায় ভাঁসতো।
ছেলেকে নিয়ে শাহেদের এই স্বপ্নের ভেলায় রিয়াজের মা'ও যাত্রী হত। হাওয়ায় ভেসে ভেসে লাল পরী, নীল পরী, সবুজ পরীর দেশে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু একি ! ছেলে যতই বড় হচ্ছে ততই ক্রিকেট পিপাষু হয়ে উঠছে।
নিজে ক্রিকেট খেলতে না পারলেও, শাহেদের ক্রিকেটের প্রতি ছিল এক অদম্য নেশা। অফিস থেকে ফিরেই ছেলেকে নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসে যেত চলমান কোন ক্রিকেট সিরিজের শুরা পান করতে। যে কোন ক্রিকেট আসরের টেলিভিসন দর্শক হিসাবে শাহেদের কোন জুড়ি ছিল না। বাবার ক্রিকেটের প্রতি এই আগ্রহ শিশু রিয়াজের মনে সবার অজান্তে ক্রিকেটটের প্রতি এক নিদারুন ভালবাসা তৈরী হল। ক্রিকেটের প্রতি ছেলের এই আগ্রহ শাহেদকে স্বপ্নের এফিডেভিট করতে বাধ্য করল। শিশু রিয়াজের এই ক্রিকেট প্রীতি শাহেদের স্বপ্নের ভেলা ভিড়ল কপিল দেব, ওয়াসিম আক্রাম, ইমরান খান, ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকারদের দরজায়। মনের অজান্তে শাহেদের কিশোর বেলার স্বপ্ন পুরন না হওয়ার বেদনা প্রশমিত করতে ছেলের মধ্যে ছড়িয়ে দিল ক্রিকেট উন্মাদনা। সেই উন্মাদনা ছড়িয়ে গেল শিশু রিয়াজের রক্তের অনুচক্রিকায়।
শাহেদ রিয়াজকে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি জেলার খ্যাতি সম্পন্ন ক্রিকেট একাডেমীতে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিল। সপ্তাহে তিনদিন শাহেদ রিয়াজকে অনুশীলনে নিয়ে যেত এবং নিয়ে আসত। ক্রিকেট প্রশিক্ষকের মুখে ছেলের ক্রিকেট প্রতিভার সম্ভবনার কথা শুনে গর্বে হাওয়ায় ভাসত। ছেলের এই ক্রিকেট প্রতিভার কথা অফিসের কলিগদের বলতে শাহেদ খুব গর্ব অনুভব করত। পাড়ার সবাই বলত, ক্লাস সিক্সের পড়ুয়া এই পিচ্চিটা একদিন একটা কিছু হবেই। শুনে শাহেদের চোখে পানি ছল্‌ ছল্‌ করত আনন্দে। রিয়াজের মাকে বলত- দেখবে আমাদের রিয়াজ একদিন বিশ্বকাপ খেলবে।
অন্যদিনের মত সেদিনও শাহেদ ছেলেকে নিয়ে ক্রিকেট অনুশীলনে গেল। শারীরিক কসরতের পর একাডেমীর ছেলেদের মধ্যে প্রীতি ম্যাচে রিয়াজ ব্যাটিং করছিল। ছেলের ব্যাটিং নৈপুণ্যে শাহেদ শিশুসূলভ অন্য এক উত্তেজনায় চিৎকার করছিল, মারো ছক্কা, .....মারো চার। সাবাস বাঘের বেটা, সাবাস। ছেলে যেন খেলছে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ব্যাট লী'কে করছে তুলোধুনো। বাবার এই শিশুসুলভ আচরণ শিশু রিয়াজকে ব্যাটিংয়ের মাদকতায় পেয়ে বসল। প্রচন্ড গরমেও যেন হাল না ছাড়া খেলোয়াড়। গরমে অতীষ্ট শাহেদের ব্রায়ান লারা হেলমেট খুলে ব্যাটিং করছে। প্রতি বলে রান। রানের বন্যায় প্লাবিত মাঠ, প্লাবিত শাহেদ।
হঠাৎ প্রচন্ড গতির একটা বল ব্যাটের কাঁনায় লেগে রিয়াজের কঁপালে সজোরে আঘাত করল। নিমিষেই রিয়াজের ছোট্ট শরীরটা কাঁপুনি দিয়ে ঢলে পড়ল মাঠে। নিথর হয়ে গেল সব। হাসপাতালের ইমাজেন্সী কক্ষ আর পেরুতে হল না। হেলমেটবিহীন রিয়াজকে একটি বলই নিথর করে দিল। স্বপ্নের সকরুণ পরিনতি যে এত নিঠুর হতে পারে, তা শাহেদ কোনদিন কল্পনাও করেনি।
কেন ভ্রু কোঁচকাবেনা শাহেদ? যে ক্রিকেট শাহেদের স্বপ্ন গড়ল, সে ক্রিকেটেইতো শাহেদের সব কিছু চুরমার করে দিল। যে দিন থেকে রিয়াজ নেই হয়ে গেল, সে দিন থেকে শাহেদ নিজেকে ক্রিকেট শুন্য করে দিল। আহা.... আজ রিয়াজ যদি বেঁচে থাকত নিঃশ্চয় বাংলাদেশে দলের বিশ্বকাপ সদস্য হিসাবে থাকত। আজ রিয়াজ নেই, তাই বিশ্বকাপটাও নিঃসঙ্গ।
........ ক্রিকেট প্রসঙ্গে নিঃসঙ্গ এই বিশ্বকাপে শাহেদের 'ভ্রু' কুঁচকানোর পূর্ণ অধিকার আছে।।

শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১০

ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি............

ওবামা, তোমার শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি
আমাকে একটুও বিচলিত করে না ।

আফগানিস্থানের বারুদের গন্ধ,
তোমার শান্তিবাহিনীর ব্রাশফায়ারে
ঝাঁঝরা বুকের খন্ডিত পিন্ড
কিংবা বেসামরিক আফগানিদের
অসংখ্য পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত
রক্তের স্রোতধারা,
অসলোর ঐ বন্ধ কক্ষ পর্যন্ত পেৌছায় না।
তাই, তোমার শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি
আমাকে বিচলিত করে না।

গুয়েনতোনামা বে কারাগারের অন্ধকুঠুরীর
তেজোদীপ্ত যুবকের তারুণ্য নষ্ট হওয়ার কষ্ট,
মদ্যপ সৈনিকের বন্দী যুবকের নগ্নদেহে
বেয়োনেটের খোঁচার আত্মচিৎকারের জবাবে
তোমার সৈনিকদের আনন্দোল্লাসের শব্দ
অসলোর ঐ বন্ধ কক্ষ পর্যন্ত পেৌছায় না।
তাই, তোমার শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি
আমাকে বিচলিত করে না।

ইরাকে শান্তি রক্ষায় নিয়োজিত
তোমার ক্লান্ত সৈনিকগুলোর
দীর্ঘদিনের জৈবিক ক্ষুধার বিষ্পোরণে
সন্তানের সম্মুখে মায়ের সম্ভ্রমহানির আত্মচিৎকার
কিংবা হাতের নিশানা অনুশীলনের বাহানায়
বন্দুকের ট্রিগার চেপে নিরীহ ইরাকীদের
বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করার জয়োল্লাস--
অসলোর ঐ বন্ধ কক্ষ পর্যন্ত পেৌছায় না।
তাই, তোমার শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি
আমাকে বিচলিত করে না।

তাই, অনেকের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে
আমিও বলি----- ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি ।।

বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১০

বৈদেশিক ঋণ নিয়ে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের নতুন তত্ত্ব

কানাডা সফররত বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কানাডা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য কানাডা সরকারের বরাদ্ধকৃত ঋণের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যেন তার সামাজিক ব্যবসা  খাতে দেওয়া হয়। ডঃ ইউনুস কানাডা সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে, বরাদ্ধকৃত অর্থ ঠিক কি খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা না জেনে কিংবা বরাদ্ধকৃত অর্থ আর কোন দিনই ফেরত পাওয়া যাবেনা, তা নিঃশ্চিত জেনেও বাংলাদেশ সরকারকে অর্থ বরাদ্ধ দেওয়ার চেয়ে তার তথাকথিত সামাজিক ব্যবসা  অর্থ বরাদ্ধ দিলে তা থেকে একটি ভাল ফল পাওয়া যাবে।

ডঃ ইউনুসের মত বিশ্ব পরিচিত দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একজন নোবেল বিজয়ী যোদ্ধার কাছে সরকার ও আমরা সাধারণ জনগনের প্রত্যাশা অনেক বেশী। তিনি দেশ, সরকার ও জাতির প্রতিনিধিত্বকারী একজন হয়েও নিজের সেই কর্পোরেট বাণিজ্যকে বেগবান করার প্রত্যয়ে একটি দাতা রাষ্ট্রের কাছে ঋণ গ্রহীতা দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে কিভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে উপস্থাপন করলেন, তা আমার বোধগম্য নয়।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস যে সামাজিক ব্যবসা  কথা বলেন, তা আমি যেমন বুঝিনা, বাংলাদেশের অনেক বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও বোঝেন না বলে আমি জানি। আমি যতটুকু বুঝি, বৈদেশিক সাহায্য রাষ্ট্রের কাছে দেওয়ায়ই সবচেয়ে উত্তম। এসব সাহায্য দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অনগ্রসর খাতসমূহে ব্যয় হবে । সাধারণত কোন দেশের নীতি বাস্তবায়নের স্বার্থেই এই সব বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সাহায্য আমাদের মত দেশে এসে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এসব সাহায্য আমাদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বাড়ায়। এসব সাহায্য যত বর্জন করা যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

বৈদেশিক সাহায্য ব্যক্তির সামাজিক ব্যবসা  খাতে দিয়ে জনগনের কি লাভ হবে ? তাছাড়া একটি দাতা রাষ্ট্রকে এই ধরনের প্রস্তাব দিয়ে রাষ্ট্রকে ছোট করার কোন অধিকার ডঃ ইউনুসের নেই ।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীন ব্যাংক, গ্রামীনফোনসহ  বিভিন্ন ব্যবসাকে যে সামাজিক ব্যবসা  বলে অভিহিত করেন সেগুলো দারিদ্রতা হ্রাসে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে ? ডঃ ইউনুস-এর কথিত সামাজিক ব্যবসা  হচ্ছে বহুজাতিক পূঁজির ছদ্মবেশী বাজার । কানাডা সরকারকে দেওয়া তার প্রস্তাবের অর্থ দাড়ায়, এদেশে বহজাতিক পূঁজিকে আমন্ত্রন জানানো । এতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কিছুই নেই।

তাই, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি আমার জিজ্ঞাসা :

বৈদেশিক ঋণের টাকায় সামাজিক বাণিজ্য, নাকি ছদ্মবেশী বহুজাতিক পূঁজির বাজার তৈরী করবে ?